“বধূ নির্যাতন”

কলমে সোনালী

(কবিতাটি উভয় পক্ষের পারস্পরিক কথোপকথনের মাধ্যমে রচিত হয়েছে)

“এ বাড়িতে থাকতে হলে,

কিছু নিয়মকানুন মানতে হবে,

আমার,আমি এই চেতনা,

আছাড় মেরে ভাঙতে হবে।

এ বাড়িতে থাকতে হলে,

কিছু বিধি নিষেধ জানতে হবে,

প্রতিভা আর স্বপ্নের কথা,

চিলেকোঠায় ফেলতে হবে।

এ বাড়িতে থাকতে হলে,

জানবে ভালোবাসা দূর হস্ত,

তবে রাত সোহাগে খামতি পেলে,

জীবন হবে বিপর্যস্ত।

এ বাড়িতে বাঁচতে হলে,

সবার তালে নাচতে হবে,

বেতাল হওয়া ঘোর অপরাধ,

সভায় তার বিচার হবে।

এ বাড়িতে,যাই ঘটুক,

কোন প্রশ্ন করা চলবে না,

অন্যথা দেখলে পরেই,

জুটবে লোহার খাঁচা,

হবে মৃত ময়না।

এ বাড়িতে জুঝতে হলে,

কিছু আদব-কায়দা শিখতে হবে,

মান,অভিমান,প্রত্যাশা সব,

আস্তাকুঁড়ে ফেলতে হবে,

এবাড়িতে চলতে-ফিরতে,

কিছু পরম্পরাও দেখতে পাবে,

প্রতিবাদের শাস্তি স্বরূপ,

এসাইলামকে বাছতে হবে।

এ বাড়িতে অষ্টপ্রহর,

একা একাই পচতে হবে,

তবে হাঁপিয়ে উঠে বাতাস ছুঁলেই,

আগুন পথে হাঁটতে হবে।

এ বাড়িতে থাকতে হলে,

সবার কথা ভাবা চাই,

শুধু নিজের কথা ভাবলে পরেই,

চোখের জলের কিনারা নাই।

এ বাড়িতে সর্বক্ষন গুণের

মাশুল গুনতে হবে,

মাকাল রানী,পাকাল রাজের,

খিস্তিখেউড় শুনতে হবে।

এখানে গুণীর প্রতি বেজায় জ্বলন,

তাই গুণের সাজা আত্মহন,

মেনে নিয়েই শিরদাঁড়া খান,

একটু একটু ভাঙতে হবে।

নচেৎ কূপমন্ডুক আস্ফালনে,

মিথ্যে কালি মাখতে হবে।

বল রাজি তবে ? ডাকি কাজী ?

সোনার শেকল গড়তে হবে,

মনে রেখো গুনে গুনে,

সব ফরমান মানতে হবে।”

“আরে আরে দাঁড়ান দাঁড়ান,

তাড়া কিসের ? খালি একতরফাই

বললে হবে?

আমার দেওয়া উত্তর গুলোও তো,

কান খুলে শুনতে হবে।

চাইনা পেতে অমন বাড়ি,

যা মূর্খ চালায় আঙুল নাড়ি,

যেখানে পাকাল রাজা,মাকাল রানী,

গুণের সাজা হয়রানি।

চাইনা যেতে এমন বাড়ি,

যেখানে ভালোবাসা দূর হস্ত,

একা একা পচবো কেন ?

বাতাস ছোঁব ই উদয় অস্ত।

শিরদাঁড়া খান ভাঙবো না তো,

রাখবো সোজা,যেমন রাখি,

বৃষ্টি ছুঁয়ে গাইবো গান,

উড়তে দিয়ে ভাবের পাখি।

স্বপ্ন আমার বড্ড প্রিয়,

সেই ছোট্টবেলা থেকে সঙ্গী।

হেলায় তাকে হারাবো না তো,

যতই হোক না চক্র ফন্দি।

খিস্তিখেউড় সে আবার কি ?

মামাবাড়ির মামদো নাকি?

অসম্মানে কাঁদবো কেনো ?

আমি গৃহবধূ,নই কয়েদি।

বিচার সভা সে আবার কি ?

কিসের বিচার ? করবেটা কে?

বিচারক যে যোগ্য মানুষ,

সেই কথা টা বলবে টা কে ?

সমালোচনায় বিঁধব কেন ?

যদি ভালোবাসাই না পাই তবে,

নিজের কথা ভাবলে কেন,

মহাভারত অশুদ্ধ হবে?

অপরাধীর ধরবো টুঁটি,

বাড়ে বাড়ুক গ্রাজের পারদ,

প্রতিবাদ তো করবই আমি,

ভয় পাইনা পাগলা গারদ।

তাই দিলাম ছুঁড়ে সোনার শেকল,

দিলাম ফেলে নিষেধ ফর্দ,

যেখানে মান আর হুঁশ

শিকেয় ওঠা,

সেখানে মানুষ-জীবন অভিশপ্ত।