মনে হওয়া কিছু কথা
কলমে সোনালী
বিশেষ করে কয়েকটি লোকের আচার-আচরণে বিতস্রদ্ধ হয়ে,কয়েকটি কথা লিখতে বাধ্য হচ্ছি।
এদের কাজ হচ্ছে ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো। আর পাড়া বেরিয়ে,প্রত্যেকের বাড়ির হাঁড়ির খবর জড়ো করে,তাই দিয়ে খিঁচুড়ি তৈরি করা। তা নাহলে এদের রন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় না। এদের আবদার, যখন, তখন এদেরকে আপনার বাড়িতে ঢুকতে দিতে হবে।আপনার বাড়িতে আপনি কি ভাবছেন,কি করছেন, সমস্ত কিছুর অংশীদার করতে হবে। আপনার জীবনকে খোলা পাতা করে,সমস্ত কিছুর জানকারি,একেবারে সুপুড়ি,জর্দা ঠোসা পানের মত করে এদের হাতে তুলে দিতে হবে। না হলেই এদের মাথার চুল খাড়া হয়ে যাবে। এদেরকে সকাল,দুপুর, সন্ধ্যে, রাত্রি যেকোন সময়,এদের মর্জি অনুযায়ী আপনার বাড়িতে অনুপ্রবেশ করার অবাধ সুযোগ দিতে হবে। যাতে যখন, তখন আপনার বাড়িতে হাহা, হির আসর বসাতে পারেন। আপনি কখন? কোথায়? কেন? যাচ্ছেন এই সমস্ত কিছুও তাদেরকে জানিয়ে যেতে হবে। না হলেই এরা আপনাকে কোন না কোন ভাবে অ্যাটাক করবে। কেন আপনি এদেরকে জানিয়ে যান নি? তাই নিয়ে তাদের গোসা হবে।
আপনি কোনো এক সময়, তাদের সাথে গল্প করতেন,অনেক আপ্যায়ন করতেন, এখন কেন করছেন না ? এখন কেন তাহলে বদলে গেলেন? তার পেছনে কি কারণ? এসবের পোস্টমর্টেম করতে উঠে পড়ে লেগে যাবেন।
এরা কিছুতেই এদের মোটা মাথায় বোঝার চেষ্টা করবেন না যে,প্রত্যেকটা মানুষ,জীবনে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে,বিভিন্ন রকমের মানসিক পর্যায় বা পর্বের মধ্যে দিয়ে যায়। সেই অনুযায়ী তার ভাবনা, চিন্তাও প্রভাবিত হয়। যে কারণে অনেক সময়ে ই তারা তাদের চিন্তা,ভাবনা,পরিকল্পনা,সৃজনশীলতার সবটুকু নির্যাস সবাইকে লুটিয়ে বা বিলিয়ে দিতে চান না।তাছাড়া দেবেন বলে কোথাও মুচলেখা ও দেননি।
তার মানে এই নয় যে তাদের প্রত্যেককেই এমন কোন আহামরি কাজ ই করতে হবে?বা রাজ্য উদ্ধার করতে হবে ,নোবেল বা পদ্মভূষণ পেতে হবে, তাদের কার্যকলাপে সারা পৃথিবী বা সমাজকে কাঁপতে হবে বা ফাটতে হবে। অত্যন্ত সাধারণ কিছু কাজও করতে পারেন তারা। হয়তো আপনার চোখে সেটা মূল্যহীন অথবা এমন কি আর কাজ। কিন্তু যিনি করছেন তিনি তার সবটুকু দিয়েই করছেন। আর সেটুকু করার জন্য অথবা নিজের মন,মেজাজ, মুড এসব কিছুকে গুরুত্ব বা প্রাধান্য দেওয়ার জন্য, তার পক্ষে আপনাকে বা আপনার মত অনেককে,খাটিয়া পেতে বসিয়ে এক দেড় ঘন্টার গল্পে নিজেকে নিয়োজিত করা সম্ভব হচ্ছে না । সেজন্য তিনি বা তারা অত্যন্ত দুঃখিত।
তাই দয়া করে কারোর আচরণে বা অভিব্যক্তিতে এমন কোন কিছু লক্ষ্য করলে, সেটাকে সম্মান জানিয়ে বা তার পেছনে নিশ্চয়ই কোন কারণ আছে এটা ভেবে, তাকে তার মত থাকতে দিন।তার বাড়িতে এসে ৪০ বার কলিংবেল বাজিয়ে, হাত, পা দিয়ে দরজা পিটিয়ে, ভেঙে সারা মহল্লার লোককে জড়ো করে দিয়ে আপনি আপনার কৌতূহলের পাড়া মাথায় জড়িয়ে,কি প্রমাণ করতে চাইছেন ? যে তিনি বা তারা তাদের বাড়িতে কোন অসামাজিক,দুষ্কৃতি মূলক কার্যকলাপে লিপ্ত হয়েছেন? যার জন্য আপনার সঙ্গে লুকোচুরি খেলছেন? তার থেকে ব্যাপারটা সহজ ভাবে নিলেই তো হয়। তিনি হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছেন, হয়তো স্নানে আছেন, বা একটা ইম্পরট্যান্ট ভিডিও কনফারেন্সে আছেন, অনলাইনে কোন ক্লাস এটেন্ড করছেন, বা তার শরীর ভালো নেই,আপনার সাথে দেড় ঘন্টা মুড়ি, বাতাসা খেতে, খেতে গল্প জমানোর মানসিক অবস্থায় নেই। হয়তো মানসিক অবসাদেই আছেন, দুশ্চিন্তা গ্রস্ত আছেন, তাই খুব হাসিখুশি, মিশুক স্বভাবের একটি মানুষ হওয়া সত্ত্বেও তার হয়তো কারো সাথে কথা বলতে সেভাবে ভালো লাগছে না। আপাতত উনি নিজের মতো করে থাকতে চাইছেন। এসব না ভেবে কিসের এত কৌতুহল ? জোর জবরদস্তি জুলুম? যে অভিমান করেই হোক,কাঁদুনি গেয়েই হোক, অভিযোগ করেই হোক, রাগ দেখিয়েই হোক,সোশ্যাল মিডিয়াতে নিজে না পেরে,একে-ওকে চর হিসেবে, সিসিটিভির মত ফিট করেই হোক,তার হাঁড়ির খবর আপনাকে পেতেই হবে? যে নিজেকে এক ধরনের চোর পুলিশ খেলায় নিয়োগ করে ফেলছেন!! রাস্তাঘাটে, হাটে,মাঠে, তাদেরকে দেখতে পেলেই লাফ দিয়ে পড়ে,পাকড়াও করে হেনস্তা করছেন ! যে তারা যদি রাস্তাঘাটে চলে ফিরে বেড়াচ্ছেন,দোকানপাটে যাচ্ছেন, সুস্থ শরীরে বহাল তোবিয়াতে আছেন।,তাহলে কেন আপনার এন্টারটেইনমেন্টের কারণ হচ্ছেন না? দোসর হচ্ছেন না? আশ্চর্য !!