“রাধিকা তুমি”
কলমে সোনালী বসুমিত্র
ভালবাসাহীন কোনো সম্পর্কই বৈধ নয়,
রীতিনীতি,রক্তচক্ষু অনুশাসনের
ঘেরাটোপে,তাই বাঁধা যায় না মন,
বাঁধা যায় শুধুই দুটো শরীর,
যাতে অন্তঃসারশূন্য,নিষ্ফল
অধিকারটুকুই,কায়েম হয়।
তাই শ্রীমতি রাধিকাকে খুঁজে পাই,
কৃষ্ণের সাথে ভক্তের মনে,
দেবালয়ে,কোন পতিতালয়ে নয়।
এ কি শুধুই সৎ সঙ্গে স্বর্গ বাসের উপহার?
এখানে কি কোন মহিমা আছে,
একাকিনী শ্রীমতি রাধিকার?
আচ্ছা,যদি কৃষ্ণের আড়ালে উঁকি দিত,
কোন দুঃশাসনের মুখ? তাহলেও কি
চিত্রটা একই থাকতো তাহলেও কি
রচিত হত বৈষ্ণব পদাবলী?
শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন?কিংবা বর্ণিত হতো?
কোন টিকিধারী পণ্ডিতের মুখে,
রাধাকৃষ্ণের ঐশ্বরিক মিলনের,
অমর অখন্ড সুখ? তখনও কি বিশ্বজুড়ে,
শ্বেত পাথরের বেদীর ওপর, বন্দিত হত
কোন মূল্যবান,রত্ন খচিত যুগল মূর্তি?
পালিত হতো কি পলাশ আবির মেখে,
রাস পূর্ণিমা উৎসব? নাকি যমুনার জলে
প্রতিফলিত হতো,কোনো সর্বহারা,
কালিমালিপ্ত, চিরন্তন নারীর মুখ?
তখনও কি কোন মেধাবী ছাত্র, রাধার
মনস্তত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করে, বাহবা কুড়োতো?
পেত? বহু তপস্বীত,স্বীকৃতি-খেতাব?
তখনও কি লেখা হত? কোন মর্মস্পর্শী গজল?
“কিউ যমুনা কে পাস খরি–ছল ছল নয়নো মে,
বিরহিনী রাধারানী ইতনি বেতাব?”
নাকি দগ্ধ হতেন রাধিকা ? এ যুগের কোন
শ্রীমতীর মত? পুড়ে মরতেন,আগুনের
লেলিহান শিখায়? আর তার গোটা শরীর জুড়ে,
চুঁইয়ে চুঁইয়ে ঝরে পড়ত,মধ্য-রাতি মায়াবী আলো ?
যা বিদ্ধ করতো,তার অভিমানী সত্বাকে,
মাদকতায় চুর,বহু শিকারি চোখের লালসায় ?
আচ্ছা, সীতা কেন রাধা নন ? রাধা কেন রুক্মিণী?
রুক্মিণী কেন বেহুলা নন?বেহুলা কলঙ্কিনী?
বেহুলা কেন কুন্তি নন ?কুন্তি দ্রৌপদী ?
দ্রৌপদী কেন সাবিত্রী নন ?সাবিত্রী সরস্বতী ?
রাবণও তো রাম নন, রাম দূঃশাসন,
দূঃশাসনও কৃষ্ণ নন, লঙ্কা তপবন।
দ্রৌপদী সীতা নন,তাইতো করেননি পাতালে প্রবেশ,
তাইতো প্রতিজ্ঞাবদ্ধ কৃষ্ণার আলুলায়িত
চুলে,ধৃষ্টতার বক্ষ চেরা,লাল রক্ত আবেশ।
যুধিষ্ঠির সত্যবাদী তবু তিনি নারী প্রশ্নের মুখোমুখি,
কৃষ্ণ কালের প্রতীক, তবু,বস্ত্রহরণের আস্ফালনে,
বিব্রত দ্রৌপদীর নিয়তি। এ যুগের কোন রাবণ,
ততটা সংযত নন,যাতে রক্ষা পায়,অগণিত সীতার,
আব্রু সম্ভ্রম? তাই সর্পদংশনে দংশিত পুরুষ
সমাজে পূন:প্রাণ পায়,তবে নাগপাশ ছিন্না নারীদের
পূনর্বাসনের অভিলাষ, আজো অতল জলের তলায়?