সোনালী মিত্র

       আমি সাধারণ মেয়ে,আমার মত আছে এমন অনেকে,

      সন্ধ্যেবেলায় আমি তুলসী তলায় প্রদীপ জ্বালি,সেই কাক

      ভোরে উঠে উনুন ধরাই,মুখে দুমুঠো গোজা অফিস যাত্রী

      স্বামীকে রওনা করে দিয়ে বলি, দুগ্গা দুগ্গা । শহরের   বুকে

      আমারই পরিচর্চায়,তরতর করে বেড়ে ওঠে, লনের

      অর্কিড গুলো।আমি সাধারণ মেয়ে,বহুদিনের গুমোট বাঁধা

      দীর্ঘশ্বাস, বৃষ্টির শীতল ছোঁয়া পেয়ে  আমার  হাতের

      এসরাজে তোলে, মালকোষের ধূন।গোলাপি জামদানি আর

      মুক্তোর  মালার  সাজে, যখন ঘনঘন ফসকায়, আমার  দিকে

      চেনা অচেনা দৃষ্টি,তখন এক অদ্ভুত প্রশান্তিতে ভোরে উঠি আমি।

      শত  ব্যস্ততায়, ছাপোষা জীবনে,কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে,আজও

      অনুভব করি,কোন এক কিশোরের অস্পষ্ট মুখ।আর আনমনা

      হয়ে বসে ভাবি,ফিদা হোসেনের রং তুলি কেন আমার ছবি,আঁকে না ?

      লেখে না কেন এযুগের কোন জীবনানন্দ দাশ,বনলতা সেনের মত

      আমার চোখের গভীরতা নিয়ে কবিতা ? আমি সাধারণ মেয়ে,সংসারের

      মঙ্গল কামনায় লক্ষ্মীর ঘটে আঁকি স্বস্তিক চিহ্ন,আর প্রদীপের আশিষ

      আঁচলে  গিট  দিয়ে  রাখি,বাড়ি ফেরতা  আপনজনদের জন্যে,আমি

      সাধারণ মেয়ে,যে সাঁওতালি রঙ্গে,মাদোলিয়া ছন্দে,শরীরি বিভঙ্গে,কোন

      এক  পর্দেশিয়া  বাবুর জীবনে, লাল গুলাব ঠু, ফুটাইছি, কিন্তু উ বাবুর

      এক্ষন আর আমার মুখ ঠো,মনেখঠো পরেক লাই। আমি সাধারণ মেয়ে,

      আমি সেই সাধারণ মেয়ে বেহুলা,যে মৃত স্বামীর পুনরুজ্জীবনের জন্য,

      অনিশ্চিতের পথে ভেলা ভাসিয়েছি,অথচ প্রতিনিয়ত কত শত কাল নাগের

      ছোবলে,বিষময় হয়ে ওঠে, আমাদের জীবন,বাঁচায় না কোন লক্ষ্মীন্দর,

      মৃত্যু থেকে জীবনের পথে।  আমি সাধারণ মেয়ে,যে কাঠফাটা রোদে

      অক্লান্ত পরিশ্রম করি,ঝুপড়িতে রেখে আসা দুটি অভুক্ত শিশুর মুখে,

       অন্ন তুলে দেব বলে। আমি সাধারণ মেয়ে,আমরা সাধারণ মেয়ে,

       যাকে অনায়াসে পেশ করা যায়, নপুংসকের বিচার সভায়,যার চোখ

        থেকে ছিনিয়ে নেওয়া যায়,স্বপ্নের কাজল, মুখ থেকে কেড়ে নেওয়া যায়,

        প্রতিবাদের ভাষা,যার সত্তাকে  কলঙ্কিত  করে, সেঁটে  দেওয়া যায়

         কিছু  তকমা, কখনো নষ্টা, কখনো বন্ধা,কখনো পাগল, না আর না।

        এবার প্রতিটি সাধারণ মেয়ের অসাধারণ হয়ে ওঠার যাত্রা শুরু হবে

        যার সাক্ষী থাকবে গোটা সমাজ। তাই নোটে গাছটি আমাদের বুড়োবে

        না. স্বপ্ন আমাদের ফুরোবে না, আমরা  বিধাতার শক্তির অপব্যয়  নই।

         আমরা বিধাতার শক্তির অপব্যয় নই।